Trouble with Bangla Script viewing ?!

Bangla Font problem? click here to get unicode font support. http://www.omicronlab.com/avro-keyboard.html

aamra animation

Thursday 17 March 2011

বিশ্ব ঝুঁকি : পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র / Great Risk : Nuke Power Plant



জাপান, শনিবার, দুপুর ৩:৩০মিঃ : আরও একবার গোটা বিশ্ব প্রত্যক্ষ করলো পরমাণু প্রযুক্তির ভয়ঙ্কর অভিশাপ! আবারও মাটি কাঁপানো বিকট আওয়াজ করে ধোঁয়ার কুন্ডুলী, দৈত্যের মত উঠে গেল উপর থেকে আরও উপরে (পরিচিত মাশরুম আকারে নয়)। জাপানের বৃহত্তম পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের (ফুকুশিমা দাইচি) ৩নং চুল্লীর ভেতরের তেজস্ক্রিয় জ্বালানির বিষ শিশার দেওয়াল আর ছাদ ফাটিয়ে ছড়িয়ে পড়লো জাপানের আকাশে বাতাসে। গাইগার কাউন্টারে সেই তেজস্ক্রিয় বিকিরণের মাত্রা কোথাও কোথাও মানবদেহের সহ্য সীমার চেয়ে ২০০ গুনেরও বেশী। 


জাপানের উত্তর উপকূলে সুনামি আছড়ে পড়ার পর থেকেই সরকারি মহলে পরমাণু চুল্লীগুলো নিয়ে বিপদের আশঙ্কা করা হচ্ছিলো। প্রথম দিকে জাপান সরকার সেনা নামিয়ে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে দাইচি পরমাণু কেন্দ্রের ৬ কি.মি. ব্যাসের মধ্যে ৪,০০০ স্থানীয় বাসিন্দাদের ‘ইমিডিয়েট ইভ্যাকুয়েশনএর অর্ডার ঘোষণা করে। এমনকি ৬ -১২ কি.মি. ব্যাসের আয়ত্তে থাকা মানুষদের বাড়ি থেকে না বের হওয়ায় পরামর্শও দেয়। কিন্তু পরমাণু কেন্দ্রের ১নং চুল্লীর ঠাণ্ডা করার ব্যবস্থা যখন উত্তরোত্তর ভেঙে পড়তে থাকে তখন পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে নিরাপদ দূরত্বের মাপও। পরমাণু চুল্লীর ৩০ কিমি ব্যাসার্ধ জুড়ে শুধু ফুকুশিমা থেকেই ৮০,০০০ এরও বেশী বাসিন্দাদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এর এলাকার বাইরের লোকদেরও অপরিশোধিত জল খেতে নিষেধ করা হয়। 

সুনামি আর ভূমিকম্পের আচমকা আক্রমণে ঘায়েল সেনডাইবাসী যখন একটু একটু করে সম্বিত ফিরে পাচ্ছে, চেষ্টা করছে প্রিয়জনদের খুঁজে পেতে, ক্রমাগত মোবাইল ফোনে খবর নিচ্ছে  বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া প্রিয়জনদের, অথবা প্রতিবেশী কারুর মৃত্যু সংবাদে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছেন, ঠিক এমন সময়েই মাটি কাঁপিয়ে বিকট আওয়াজে ফেটে গেল ফুকুশিমা দাইচি ৩নং চুল্লী। কুলিং প্ল্যান্ট নষ্ট হয়ে যাওয়ার ফলে সকাল থেকেই পাঁচটা চুল্লীর মাথা থেকে ধুসর ধোঁয়া বেরোতে দেখা যাচ্ছিলো। সবচেয়ে বেশী গরম হয় ১নং চুল্লী, প্রথমে সেটাতেই আগুন লেগে যায়। এরপর বিস্ফোরণে ৩নং চুল্লীর ছাদ সমেত দেওয়াল উড়ে গেল, ক্ষতিগ্রস্ত হল কম বেশী সবকটা চুল্লী। মুহূর্তে বাতাসে ছড়িয়ে পড়লো তেজস্ক্রিয়তা। পরিবেশের পক্ষে চরম ক্ষতিকর তেজস্ক্রিয় পদার্থ আয়োডিন ১৩১, সিসিয়াম ১৩৭, স্ট্রনশিয়াম ৯০, প্লুটোনিয়াম মিশে গেল বাতাসে, মাটিতে। এতেই বিপদ কেটে গেলনা। দিন দুই পরে আবারও বিস্ফোরণ, এবার ৪ নং চুল্লী, প্রচণ্ড উত্তাপে গলে গেল অন্তত ৭০ শতাংশ জ্বালানী দণ্ড, তিন দিন ধরে নাগাড়ে বিস্ফোরণ আর আগুনের দ্বৈত আক্রমণে হেরে গেল যাবতীয় সমাধানের প্রচেষ্টা। তেজস্ক্রিয়তা জাপান ছাড়িয়ে ৮০০ কি.মি. পাড়ি দিয়ে পৌঁছে গেল রাশিয়ার সীমায়। 


প্রথম প্রথম বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ এবং প্রায় সবকটা বড় মিডিয়া কোমর বেঁধে নেমে পড়লো পরমাণু বিদ্যুৎ প্রযুক্তির বিপদের পরিমাণ যতটা সম্ভব কমিয়ে দেখানোর জন্য। শুরুর দিকে প্রায় সবকটা ইলেকট্রনিক মিডিয়ার ব্রেকিং নিউজে দেখা যাচ্ছিলো ‘কমে আসছে তেজস্ক্রিয়তার পরিমাণ।এরই মধ্যে বেরিয়ে এলেন (নাকি পাঠানো হল!) টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষক নাওতো সেকিমুরা, বললেন ‘খুবই সামান্য পরিমাণে জ্বালানি বেরিয়ে এসেছে, এতে ক্ষতির কোনো আশঙ্কা নেই। অযথা ভয় পাবেন না। জাপানের পারমানবিক নিরাপত্তা সংস্থার অফিসারেরা প্রথমেই বললেন চেরনোবিলের সাথে দাইচির কোনও তুলনাই হয়না, দাইচির ঘটনা খুবই ছোটো এবং এ থেকে যে তেজস্ক্রিয়তা ছড়াচ্ছে তাতে বড় ধরনের কোনও বিপদের সম্ভাবনা নেই।এর পরে  লাগাতার যখন চুল্লীগুলো ফেটে যেতে থাকে আর স্থানীয় বাসিন্দাদের আরও আরও দুরে নিরাপত্তার কারণে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হতে থাকে জাপান সরকার তখন আবার ঘোষনা করল দাইচির ৮০ কি.মি. ব্যাসার্ধের মধ্যে কোনো বাসিন্দা যেন না থাকে। তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে যাতে না পড়ে তার জন্য ব্যবস্থা চলছে… খুব বেশী চিন্তার বিষয় নেই।



এখন প্রশ্ন : যদি সত্যিই চিন্তার কোনও কারণ না থাকে তাহলে কেন ৯৬ ঘণ্টার পরেও ঠিক করা গেলনা দাইচির কুলিং প্ল্যান্ট (পরিস্থিতি এতটাই জটিল হয়ে ওঠে যে কুলিং প্ল্যান্টের জলও ফুটতে শুরু করে)? কেন বারবার বলতে হচ্ছে বড় ধরনের কোনও ভয়ের আশঙ্কা নেই? অথচ আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার সাথে ঘন ঘন বৈঠকের প্রয়োজন হচ্ছে! কেন আমেরিকা বা অন্যান্য দেশ থেকে উড়ে আসতে চলেছে কুলিং এজেন্ট? কেন মার্কিন বিদেশ সচিবকে জাপানে সেনা পাঠাতে হচ্ছে কুলিং এজেন্ট ছড়াতে? পৃথিবী গ্রহের সবচেয়ে আধুনিক প্রযুক্তিধর রাষ্ট্রের হাতে কি প্রয়োজনীয় হেলিকপ্টার বা কুলিং এজেন্ট ব্যবহার করার প্রযুক্তি নেই! নাকি নেই জাপানের সর্ববৃহৎ পরমাণু কেন্দ্র রক্ষা করার মত উপযুক্ত সংখ্যক সেনা?  প্রশ্নগুলো সোজা আর উত্তরও তো জানা...

পরমাণু বিদ্যুৎ প্রযুক্তির ক্ষতিকর দিকগুলির কয়েকটি উদাহরণই যথেষ্ট এই প্রশ্নগুলোর উত্তর হিসেবে।
  • এখনো পর্যন্ত ধারণা করা হচ্ছে শুধু জাপানেই কয়েক দিনের মধ্যেই ৬৫ লক্ষ মানুষ তেজস্ক্রিয়তার প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। 

  • সমুদ্র তটবর্তী অঙ্চলের দশটি বড় দেশের সমস্ত নাগরিকই চুড়ান্ত ঝুঁকির মধ্যে পড়ে গেলেন।  ফিলিপিন্স, মালয়েশিয়া, তাইওয়ান, নর্থ কোরিয়া, কিউবা, গ্রীস, পর্তুগাল, ডোমিনিকান রিপাবলিক, হাইতি, হং কং।   এই দেশগুলোর ১০০ শতাংশ জনগন উপকুল থেকে ১০০ কি.মি.র মধ্যে বসবাস করে।

  • একটি পরমাণু বিদ্যুৎ চুল্লী একটি পরমাণু বোমার চেয়ে ২৫০০ গুনেরও বেশী ক্ষতিকর! কেন? কারণ প্রতি বছর একটি পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে ২০০ – ২৫০ কিলোগ্রাম প্লুটোনিয়াম তৈরি করে আর একটি বোমার জন্য লাগে মাত্র ৪.৫ কি.গ্রা.  এই ভাবে একটি পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের গড় আয়ু ৫০ বছর হলে হিসেবটা দাঁড়ায় ২৫০ x ৫০÷ ৪.৫ = ২৭৭৭.৭৭ !!!!!!! এক একটি পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রে গড়ে ৪-৫টি চুল্লী থাকে।
  •  
  • প্লুটোনিয়ামের অর্ধ-জীবৎকাল = ২৪,৪০০ বছর। অর্থাৎ ১ গ্রাম প্লুটোনিয়াম তেজস্ক্রিয় বিকিরণ করতে করতে ০.৫ গ্রামে আসতে সময় লাগবে ২৪,৪০০ বছর। আবার ০.৫ গ্রাম প্লুটোনিয়াম অর্ধেক হতে সময় লাগবে আরও ২৪,৪০০ বছর। এই ভাবে সম্পূর্ণ নিঃশেষ হতে সময় লাগবে ১০ লক্ষ বছর (যদিও প্লুটোনিয়ামের সম্পূর্ণ বিলুপ্তি ঘটেনা)।
  •  
  • একটা পরমাণু বিদ্যুৎ চুল্লীর কোরে যে শয় শয় তেজস্ক্রিয় রড প্রতি বছর বাতিল করা হয় তার যে কোন একটাকে মাটিতে রেখে তার ওপর দিয়ে আড়াআড়ি ভাবে আপনি যদি একটা বাইক ১৪৫ কি.মি. গতিতে ছুটিয়ে নিয়ে যান তাহলেও তেজস্ক্রিয়তার প্রভাবে আপনার মৃত্যু নিশ্চিত। এই বাতিল জ্বালানী রডটা এতটাই তাপীয় আর তেজস্ক্রিয় বিকিরণ ছড়িয়ে দেবে আপনার শরীরে।
  • একটি প্লুটোনিয়াম অণু আলফা কণা বিকিরণের মাধ্যমে একটি কোষ এবং কোষস্থ জিনের ক্ষতি করে।  ক্ষতিগ্রস্ত জিনের ধারণকারী কোষটি কিন্তু ১৫ বছর পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে ঘুমন্ত অবস্থায়। স্বাভাবিক নিয়মে একটি কোষ বিভাজিত হয়ে দুটি নতুন কোষের জন্ম হয় কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত জিন-ধারী কোষের ক্ষেত্রে সে নিয়ম খাটেনা। হঠাৎ করেই জেগে উঠে ঘুমন্ত কোষটি দুটি নতুন কোষের বদলে জন্ম দিতে থাকে লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি কোষের। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় আমরা যাকে বলি ক্যান্সার। আবার যেহেতু এই নতুন কোষগুলিও তেজস্ক্রিয় এবং তেজসম্পন্ন এগুলি ভেঙে গিয়ে রক্তের মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে এবং সুস্থ কোষগুলোর ডি.এন.এ.কে প্রভাবিত করতে থাকে, ফলে চক্রবত এই প্রক্রিয়া নিশ্চিত মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
    এবার বলুন দাইচির এই ‘সামান্য পরিমাণ জ্বালানি বেরিয়ে আসার ঘটনায় আমাদের ভাবনার কারণ আছে কি নেই। ক্রমাগত দীর্ঘকালীন ক্ষয় ক্ষতির তথ্য গোপন করার এই প্রচেষ্টা আমাদের ভাবতে বাধ্য করছে এই মুহুর্তেই বিদেশি বা দেশি পরমাণু শক্তির কারবারী বা দালালদের সম্বন্ধে যদি আমরা সাবধান না হই তা হলে আরও শয়ে শয়ে চের্ণোবিল বা দাই-ইচি অবস্যম্ভাবী। আমাদের ভবিষ্যত, আমাদের উত্তরপুরুষের ভবিষ্যত ঠিক কেমন হবে তা নির্ধারণ করতে হবে আমাদেরই। পরমাণু বিদ্যুত প্রকল্পের সুফলের যুক্তির আড়ালে লুকিয়ে থাকা সর্বনাশের কারবারীদের পিছু হঠতে বাধ্য করি। হাত গোটাক বাংলা তথা ভারতের কিংবা পৃথিবীর জল জমি জঙ্গলকে কলুষিত করার মতলববাজরা


    Anupam Das Adhikary
    anupam.das77@gmail.com 

    No comments:

    Post a Comment